সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কাউনিয়া ৮২ পিচ মাদক সহ আটক ১ বরিশালে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ডিলারের বিরুদ্ধে কিডনি খারাপ কারন কি? পদমর্যাদায় ৯ পুলিশ সুপারসহ ১১ কর্মকর্তা বদলি সরকার সংস্কার কমিশনের ১৩ প্রস্তাব নভেম্বরে বাস্তবায়ন করবে : তথ্য উপদেষ্টা বিটিআরসির জরুরি বার্তা! ৪ দিন পরই বাতিল হয়ে যাবে অতিরিক্ত সিম? যে শর্তে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ল! শিক্ষকদের আন্দোলন ত্যাহার:আগামীকাল থেকে ক্লাস শুরু! ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় গলাব্যথা কমাতে পারে! এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি নতুন বেতন নির্ধারণে সরকারি কর্মচারীদের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক অগ্নিকাণ্ড ঘটনায় নতুন কর্মসূচি জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মিরপুরে প্রিন্টিং কারখানায় নিহত-৯ আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই: সিইসি
দেনাদার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক: শাজাহান খান

দেনাদার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক: শাজাহান খান

দেনাদার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক: শাজাহান খান
দেনাদার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক: শাজাহান খান

অনুসন্ধান ২৪>> আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল ছিল লুটতন্ত্রের। আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তি যেভাবে পেরেছে দুর্নীতি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। এই লুটতন্ত্রে যারা শীর্ষ লুটেরা ছিল, তাদের অন্যতম একজন হলেন শাজাহান খান।

শাজাহান খান একসময় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা হলেও পরে তিনি জাসদে যোগ দেন। জাসদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জাসদের সশস্ত্র সংগঠন গণবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শাজাহান খান ছিলেন দেনাদার। বর্তমানে তিনি হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ওই নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শাজাহান খানের মাসিক আয় ছিল ৫৭ হাজার ৮৬ টাকা। তার স্ত্রীর শিক্ষকতা পেশা থেকে মাসে আসত ৫ হাজার ২০০ টাকা। তখন তাদের স্বামী-স্ত্রীর হাতে নগদ কোনো টাকা ছিল না। বরং ঋণ ছিল ৪২ লাখ টাকার বেশি। ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬ টাকা। ২০০৮ সালে শাজাহান খানের নিজ নামে স্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র তিনটি স্থানে। এ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে যৌথ মালিকানায় স্থাবর সম্পদ ছিল। বর্তমানে তার নিজ নামে স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কমপক্ষে ১৫ স্থানে এবং যৌথ মালিকানায় রয়েছে আরো ছয় স্থানে। ১০ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে ছিল দুই স্থানে স্থাবর সম্পদ। বর্তমানে স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৩ স্থানে।

কাগজে-কলমে তিনি একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা। তার বৈধ কোনো আয়ের উৎস ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই তিনি যেন পেয়ে যান ‘আলাদিনের চেরাগ’। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক।

এরপর আর তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্রুতগতিতে ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা। তৈরি হয় ক্ষমতার বলয়। একে একে নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকেন মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। প্রভাব বাড়তে থাকে তার পরিবার ও স্বজনদের।২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আগে তার মাসিক আয় ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মন্ত্রী হওয়ার পর তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় শত গুণ। নিজ জেলা মাদারীপুর আর ঢাকা শহরে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। আছে আবাসন, হোটেল ও শিপিং ব্যবসা। শাজাহান খান তার ক্ষমতার দাপটে মাদারীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চেম্বার অব কমার্সও দখলে নিয়েছিলেন। মাদারীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিজেই সভাপতির পদ দখল করেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে বসান তার বন্ধু সৈয়দ আবুল বাসারকে। চেম্বার অব কমার্সের দায়িত্ব দেন ছোট ভাই যাচ্চু খানকে। এসব দখল করেই ক্ষান্ত থাকেননি। তিনি নৌমন্ত্রী থাকাকালে নৌ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর ব্যবহার করে মাদারীপুর প্রেস ক্লাব দখল করেন। প্রেস ক্লাবের দায়িত্ব দেন তার বন্ধু সাংবাদিক শাহজাহান খানকে। এভাবেই তিনি মাদারীপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করেন।

১৯৭০ সালে মাদারীপুর সদর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তার ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছিল। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানার একটি অস্ত্র মামলায় তার বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছিল। এ রকম একাধিক মামলা হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো মামলাতেই তাকে জেলহাজতে যেতে হয়নি। সব সময়ই ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৩ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দিয়ে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

১৯৭২ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সর্বহারা ও জাসদের একাধিক নেতাকর্মীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে কোনো ঘটনাতেই তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করার সাহস পাননি। আওয়ামী লীগের পতনের পর গ্রেপ্তার করা হয় শাজাহান খান এবং তার পুত্রকে। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থা তার দুর্নীতি এবং অপকর্মের তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে শাজাহান খান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও তার পরিবারের পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

মামলায় সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তার ব্যাংক হিসাবে ৮৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুদক। অন্যদিকে তৃতীয় মামলায় তাদের ছেলে আসিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে পৃথক তিনটি মামলা করা ছাড়াও শাহজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানের নামে ১ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৯২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করেছে দুদক।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৮৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৯ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় আসামি হয়েছেন শাজাহান খান ও তার স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগম। শাজাহান খানের অবৈধ সম্পদে আসামি হয়েছেন রোকেয়া বেগম।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ‘আমার চট্টগ্রামবাসী’ নামের সংগঠনের ডাকা অবস্থান কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন শাজাহান খানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে। এসব দুর্নীতি তদন্তের জন্য তিনি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি করেন। সমাবেশ থেকে বন্দরের লস্কর পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল না করলে নৌমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের লস্কর পদে সাম্প্রতিক নিয়োগে মাদারীপুর জেলা থেকে বেশি চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পেয়েছে এমন অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ওই নিয়োগ বাতিলের দাবিও ওঠে।

তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৮৪৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তৃতীয় মামলায় বাবার সঙ্গে আসামি হয়েছে মো. আসিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। শাজাহান খান যে মহা দুর্নীতিবাজ ছিলেন, তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জানতেন। শাজাহান খানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর।

খোরশেদ বলেন, ‘আমি মনে করি শুধু লস্কর নিয়োগ নয়, চট্টগ্রাম বন্দরে শাজাহান খান আসার পর থেকে যতগুলো লোক নিয়োগ হয়েছে, সবগুলো দুর্নীতিপূর্ণ হয়েছে। সবগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। কিন্তু এসব দুর্নীতির অভিযোগের কোনো তদন্তই হয়নি। কারণ শাজাহান খানের ছিল নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। এরা হলো পরিবহন শ্রমিক। এই শ্রমিকদের দেখিয়েই শাজাহান খান সরকারের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন থাকতেন। কারণ বিরোধী দলকে দমনের জন্য ব্যবহার করা হতো এসব পরিবহন শ্রমিকদের। একদিকে এসব পরিবহন শ্রমিকদের শোষণ করে অন্যদিকে লাগামহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিঃস্ব থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শাজাহান খান।সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

আরও পড়ুন

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © অনুসন্ধান24 -২০১৯