সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কাউনিয়া ৮২ পিচ মাদক সহ আটক ১ বরিশালে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ডিলারের বিরুদ্ধে কিডনি খারাপ কারন কি? পদমর্যাদায় ৯ পুলিশ সুপারসহ ১১ কর্মকর্তা বদলি সরকার সংস্কার কমিশনের ১৩ প্রস্তাব নভেম্বরে বাস্তবায়ন করবে : তথ্য উপদেষ্টা বিটিআরসির জরুরি বার্তা! ৪ দিন পরই বাতিল হয়ে যাবে অতিরিক্ত সিম? যে শর্তে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ল! শিক্ষকদের আন্দোলন ত্যাহার:আগামীকাল থেকে ক্লাস শুরু! ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় গলাব্যথা কমাতে পারে! এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি নতুন বেতন নির্ধারণে সরকারি কর্মচারীদের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক অগ্নিকাণ্ড ঘটনায় নতুন কর্মসূচি জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মিরপুরে প্রিন্টিং কারখানায় নিহত-৯ আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই: সিইসি
আমি ব্যর্থ! সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বরিশাল।

আমি ব্যর্থ! সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বরিশাল।

আমি ব্যর্থ! সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বরিশাল।
আমি ব্যর্থ! সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বরিশাল।

আনোয়ার হোসেন .. বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের মেইন ফটকে সাজানো থাকে ওষুধ কোম্পানির সারি সারি মটরসাইকেল, তিল পরিমান ফাঁকা থাকেনা হাসপাতালের মেইন গেইটের সামনে? হাসপাতালের মেইন ফটকে ওষুধ কোম্পানির গাড়ি রাখার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডা. সিভিল সার্জেন মারিয়া হাসান বলেন, আমি ব্যর্থ?

হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষার জন্য অভিযোগ না দিয়েছি এমন কোন দপ্তর নেই, আমরা কোন বাহিনী থেকে সহযোগীতা পাইনি। তাই আমি ব্যর্থ! যদি পারেন আপনারা তো সংবাদকর্মী আপনারা ব্যবস্থা নেন।

তার কথার সত্যতা খুজতে অনুসন্ধান করতে থাকেন অনুসন্ধান ২৪ এর টিম। সরেজমিনে দেখা জায়, গাড়িগুলো কোম্পানি প্রতিনিধিদের। সকাল হলে দেখা জায়, কোম্পানির প্রতিনিধিদের গাড়িতে আসে কর্তব্যরত ডাক্তারগন। তারা সবাই সদর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। তাদের নামিয়ে মেইন গেইটে গাড়ি রেখে কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের সাথে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে চেম্বারের সামনে, ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র দেয় রোগীদের, আর সেই ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলেন গেইটে দাড়িয়ে থাকা কিছু লোক। প্রথমে মনে করেছিলাম চিকিৎসকের ভুল ধরার জন্য গেইটে দাড়িয়ে থাকে চিকিৎসকের শিক্ষক। পরে দেখি না, কোম্পানির প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে ডকুমেন্ট হিসেবে রাখেন তাদের কোম্পানির কয় আইটেমের ওষুধ লিখেছেন ডাক্তার সাহেব। গেইটে কোম্পানির প্রতিনিধি সাথে দাড়িয়ে থাকে বেশ কিছু দালাল। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দেয় রোগীদের, ছবি তুলে কোম্পানির প্রতিনিধি, কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছবি তুলে ব্যবস্থাপত্র দেয় দালালের হাতে। চিকিৎসক এবং কোম্পানির প্রতিনিধি ও দালালদের সু-সম্পর্ক দেখে মনে হয় তারা সবাই এক মায়ের সন্তান।

 

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক কোম্পানির প্রতিনিধি ও দালালদের কারসাজি নতুন নয়। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। হাসপাতালে দালালের সাথে প্রতাপ দেখাচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিরা। রোগীদের কাছে তারা ত্রাস। যে কারণে হাসপাতালের পরিবেশ-পরিস্থিতি চরম অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষের দরজায় লেখা- ‘সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির দেখা করা নিষেধ। ’ যদিও এমন কোনো নিয়ম কোনো কোম্পানির জন্য বর্তায় না। কিন্তু বরিশাল জেনারেলে তার বালাই নেই। কোনো প্রতিনিধি নিয়ম মানেন না। ডাক্তার দেখিয়ে রোগী বের হলেই তার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে টানা হেঁচড়া। অনেক সময় দেওয়া হয় হুমকি। এতে ভয়-ভোগান্তি দুটোই পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের।

বর্তমানে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। তাই প্রতিটি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করে থাকে দালালরা। সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। বহির্বিভাগের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সামনে সবচেয়ে বেশি দালাল ও প্রতিনিধি দেখা যায়। জানা গেছে, দালালরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন রোগীদের ভিন্ন ভিন্ন অসুখের জন্য ভর্তি বাণিজ্য, অপারেশন, ওষুধ কেনাসহ প্রতারণা করে থাকে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। কয়েক দলে ভাগ হয়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও রোগী বা তাদের স্বজনদের জেঁকে ধরেন। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে নিয়ে যান। স্বল্প মূল্যে ওষুধ কেনার জন্যও তারা প্ররোচিত করেন। চিকিৎসকদের চেম্বারের বাইরে রোগীদের চেয়ে এসব দালাল-প্রতিনিধির আধিক্য বেশি। হাসপাতালের মেইন গেইট ও চেয়ারগুলোও তাদের দখলে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগও আছে ব্যাপক।

সরেজমিনে হাসপাতালের অবস্থা পর্যবেক্ষণের সময় বিভিন্ন ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের তথ্য কর্মকর্তাকে দেখা যায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে তাদের কোম্পানির ওষুধের নাম লেখাতে চিকিৎসকের জন্য উৎকোচ নিয়ে এসেছেন। এ সময় তাদের গলায় কোম্পানির পরিচয় পত্রও ছিল।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানকে দালাল ও কোম্পানির প্রতিনিধিমুক্ত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়! কিন্তু হাসপাতালের দেওয়ালে পরিষ্কারভাবে লেখা-চিকিৎসকরা সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সাক্ষাত গ্রহণ করবেন না। এ নোটিশ ঝোলানো হলেও থোড়াই কেয়ার করেন প্রতিনিধিরা। হাসপাতাল দালালমুক্ত করার কথা বলা হলেও প্রতিনিয়ত দালাল যুক্ত হচ্ছে বরিশাল জেনারেলে। তারা বিভিন্ন রোগীর ব্যবস্থাপত্র, এক্সরে, বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে স্বজনদের প্ররোচিত করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। রোগী বা স্বজনরা কোনো সময় রাজি না হলে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। হুমকিও দেওয়া হয়।

আক্ষেপ প্রকাশ করে এক রোগী বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। এরমধ্য বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকজন ডাক্তারের রুমে এসে অনেক সময় নষ্ট করে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে আমাদের রোগ সম্পর্কে জেনে যায়। বার বার না করলেও তারা জোর করে। নারী-পুরুষ সবাইকে বিরক্ত করে।

আরেক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতালের দালালরা আমাদের বিভিন্ন সময় হয়রানী করে। তারা রোগ পরিক্ষার করাতে অন্য মালিকানা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গালাগাল দেয়, হুমকি দেয়। সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে এসে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়লে আমাদের যাওয়ার জায়গা কোথায়। অর্থ-সম্পদ থাকলে তো আর সরকারি হাসপাতালে আসতাম না।

হাসপাতালের নার্সরা নিজেরাই স্লিপে ওষুধ লিখে প্রয়োজনী ওষুধ নিয়ে জায়, সংবাদর্কমীরা জিজ্ঞেস করিলে বলে আমাদের ঘরের সকলে জন্য ওষুধ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে মেডিকেল অফিসার এমন কথার সত্যতাও মিলে। তাই রোগীদের বরাদ্দ ওষুধ নার্সদের মধ্যেই ভাগাভাগী।

পরিচয় গোপন করে হাসপাতালের কর্তব্যরত অনেক স্টাফ বলেন, হাসপাতাল চলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এমও)র নির্দেশে তিনি নিজেই আসেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির গাড়িতে।

তারা বলেন, এই হাসপাতাল এমন ছিলো না, আর এমও যোগদানের পরে সব কিছু এলোমেলো। আগে চিকিৎসকরা ডিউটিতে আসতেন সময় মতো, আর এখন চিকিৎসক বাড়ছে তবুও তারা নির্দিষ্ট সময় আসে না, সময়ে আগেই হাসপাতাল থেকে চলে জায়। তারা আরও বলেন, ডিউটিতে কতো জন চিকিৎসক থাকার কথা আর কয় জন আসলো তার খবর রাখে না আবাসিক মেডিকেল অফিসার আর এমও। তার যোগদানের পর থেকে সকল দপ্তর অনিয়মে ছেয়ে গেছে।

তারা বলেন, আমরা কোন অভিযোগ দিলে মাথা নাড়া দিয়ে বলেন, বিষয়টি আমার মাথায় আছে কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া জায় না, তাই আমরাও অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করে ফেলছি। এক কথায় সদর জেনারেল হাসপাতাল চলে চিকিৎসকদের মনগড়া সময় দিয়ে।

মেইন ফটকের সামনে গাড়ি রাখাসহ সকল অনিয়মের বিষয় জানতে চাওয়া হলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আর এমও মলয় কৃঞ্ষ বলয় বলেন, বিষয়টি আমি দেখবো। কিন্তু মাসের পর মাস হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয় প্রশ্ন করলে তিনি কথা বলতে নারাজ।

তারা সিভিল সার্জন এর বিষয় বলেন, সিভিল সার্জন যখন হাসপাতালে আসেন তখন আর এমওকে জানিয়ে আসেন, তিনি আবার সকল চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেন। তারা বলেন, আমরা কখনো দেখিনি যে, সিভিল সার্জন একা এসে হাসপাতাল পরিদর্শন করছে। যদি তাই হতো তা হলে হাসপাতালের এমন দুর্গতি হতো না।

বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিলেও সংবাদ প্রকাশ পযর্ন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © অনুসন্ধান24 -২০১৯