রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন
অনুসন্ধান২৪>> বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আজ রোববার সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় বরগুনা উপকূলের বাসিন্দারা। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তারা।
প্রতিবছর দু-চারটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এর আগে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় সর্বস্ব হারানো এখানকার অনেকেই এখনো খুঁজে ফেরেন স্থায়ী নিবাস। আবার অনেকেই আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছেন বেড়িবাঁধের কিনার। এখনো সেখানেই ঝুপড়িতে কাটছে তাঁদের জীবন।
উপকূলীয় এসব এলাকায় যেকোনো দুর্যোগ বা বৈরী আবহাওয়ায় নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে বাঁধে ভাঙন তৈরি হয়, বাঁধ ভাঙে যায়। প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নষ্ট হয় ঘরবাড়ি, ফসল। ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় মানুষ। একেকটি দুর্যোগ বদলে দেয় উপকূলের চিত্র।
বরগুনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলার জন্য ৪২২ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ এবং গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৪৯টি মেডিকেল টিম এবং ৩৭ লাখ নগদ অর্থ প্রস্তুত রয়েছে।
এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন ৯ হাজার ৬১৫ জন, যাঁরা ঘূর্ণিঝড়-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবেন। খোলা হয়েছে ১০টি কন্ট্রোলরুম। এ ছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট রয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব বাঁধ ভেঙে গেলে তাৎক্ষণিক মেরামতের জন্য ৮০০ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপৎসংকেত জারি হলে তাঁরা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন।এদিকে বরগুনা জেলার পায়রা, বুড়িশ্বর নদীর বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় দেখা দিয়েছে এই ভাঙন। এতে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ লবণপানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই এলাকার সাড়ে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পাউবো।
অন্যদিকে বরগুনা জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। এতে আশ্রয় নিতে পারবে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে।বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন জেলেরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমাল যখন উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধ চলছে। তাই জেলেরা এ বছর রিমালের হাত থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকবেন। আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। আশা করছি খুব কম ক্ষতির মধ্য দিয়ে আমরা ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
স্থানীয়রা জানান, পরিকল্পিত আর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার মানুষ। এদিকে পায়রা, বুড়িশ্বরের জোয়ারে প্রায় ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ নদীতে চলে গেছে। বাঁধের মাত্র দু-তিন ফুট জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে। দ্রুত মেরামত করা না গেলে পরে জোয়ারে বাঁধে ধস শুরু হবে। এতে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনার উপকূলীয় এলাকাগুলোর ক্ষতি হয়। এর মধ্যে পাথরঘাটা, নিশানবাড়িয়াও তালতলী উপজেলার মানুষের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এরপর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।