শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
অনুসন্ধান ২৪>>উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ মেনে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫, নাকি অধ্যাদেশ জারি হবে– তা গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। গণভোট আগে হবে, নাকি নির্বাচন– এই সিদ্ধান্তও উপদেষ্টার পরিষদে হবে। তবে সিদ্ধান্ত জানানো হবে আরও দুয়েক দিন পর। একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় না আসায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হচ্ছে। কী সেই পদক্ষেপ, তা তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জানানো যাবে। তিনি বলেন, ‘সব দলের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেছি। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ভালো কিছু হবে।
সংবিধানে নেই– এই যুক্তি দেখিয়ে বিএনপি গতকাল আদেশ জারির বিরুদ্ধে মত দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ার দিয়েছে, সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না। বিএনপি হুঁশিয়ার করেছে, জুলাই সনদের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত সরকার দিলে তারা তা মানতে বাধ্য থাকবে না।
সরকারের সিদ্ধান্তে যা থাকতে পারে
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির দাবি সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী, নির্বাচন ও গণভোট এক দিনে হতে পারে। জামায়াত ও এনসিপির দাবি অনুযায়ী, গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকবে না। বিএনপির দাবি পূরণ করতে আগামী সংসদের ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদকে’ নোট অব ডিসেন্ট অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দেওয়া হবে। জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য দলের দাবি পূরণে পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিধান থাকতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, আসিফ নজরুল ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আদিলুর রহমান, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছেন।
ফাওজুল কবির সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। সরকার আর সময় নিতে চায় না। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে।
আদেশ নাকি অধ্যাদেশ জারি হবে– এই প্রশ্নে ফাওজুল কবির বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হবে উপদেষ্টা পরিষদে। সনদ বাস্তবায়নে যা আইনানুগ হবে, সেই সিদ্ধান্তই সরকার নেবে।
গত ৩০ অক্টোবরের বৈঠকে অধিকাংশ উপদেষ্টা গণভোট এবং নির্বাচন এক দিনে আয়োজনের মত দিয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, গণভোট কবে– এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা দেবেন।
অবশ্য ৩ নভেম্বরের জরুরি বৈঠকে একাধিক উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন, একই দিনে গণভোট এবং নির্বাচন হলে সংস্কার কীভাবে হবে? এই বৈঠক থেকেই সমঝোতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু আলোচনা-সমঝোতা হয়নি।
তাহলে সরকার কী সিদ্ধান্ত জানাবে– এই প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির বলেছেন, তা উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনাতেই ঠিক হবে। তবে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কাজ করছে।
সরকারের মধ্যে মতভিন্নতা
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয় উপদেষ্টার মধ্যে একজন এখন বিএনপির অবস্থান অনুযায়ী জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে। তিনি অভিমত দিয়েছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ভার আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়ে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে বিদায় নেওয়া। এ নিয়ে সদ্য বিলুপ্ত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মতবিরোধ হয় ওই উপদেষ্টার।
অন্তত দুজন উপদেষ্টা এই মতের পক্ষে নন। তাদের অবস্থান হলো, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন। একটি পর্যায় পর্যন্ত সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়ার পর তা সরকার পরবর্তী সংসদের দিকে ঠেলে দিতে পারে না।
দলগুলো অনড় অবস্থানেই
সরকারের সূত্রগুলো আগেই জানিয়েছিল, দলগুলোর ভাষণে যতই উত্তেজনা তৈরি হোক, নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তারা। এ বিষয়ে সরকার আত্মবিশ্বাসী। তবে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সেই ক্ষেত্রে সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে। নোট অব ডিসেন্ট যেভাবে রয়েছে, সেভাবেই সংস্কার করবে নির্বাচনে ম্যান্ডেট পাওয়া দল। নির্বাচনের দিনে গণভোট হতে হবে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গণভোটে নোট অব ডিসেন্টের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতে জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে। যারা জুলাই বিপ্লব মানবে না, তাদের জন্য ছাব্বিশের নির্বাচন নেই। বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচনের সম্ভবনা নেই।
আরো পড়ুন