সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন
অনুসন্ধান২৪>> ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।’ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আজ (বৃহস্পতিবার) ঈদের খুশি বইছে। দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে মেতেছেন।
ঈদ ধর্মীয় উদযাপন হলেও বাংলাদেশে তা উৎসবেরও। প্রিয়জনের কাছে ফেরা ঈদের প্রধান আনন্দ। গত শুক্রবার থেকেই লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটে যান। জীবিকার জন্য শহরবাসী মানুষ শত ভোগান্তি মেনেও হাসিমুখে ঈদে নাড়ির টানে ছুটেন বাড়ি। ভাঙা মহাসড়ক, যানজট, টিকিটের হাহাকার; কোনো কিছুই বাধা নয়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য সব বাধা তাদের কাছে তুচ্ছ।
গতকাল বুধবার ৩০তম রোজার ইফতারের পর পরই দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়। সেই সঙ্গে রমজান শেষে ঈদের বারতা পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে। ইসলামের ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করা হয় সাধারণত হিজরি বর্ষপঞ্জির চান্দ্র মাসের হিসাবে। সেই মোতাবেক এবার রমজান মাসের সিয়াম সাধনা শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টীয় দিনপঞ্জির গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার। ২৯ রমজান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসে। তবে দেশের কোথাও চাঁদ দেখা না যাওয়ায় এবার রোজা হয় ৩০টি।
এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। দিনটি শুরু হয় ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন ঈদগাহে সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ। ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত দেশের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লার ঈদগাহ ময়দানও। ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ছাড়াও দুই সিটি করপোরেশন আরও ৩৬০টি জামাতের আয়োজন করেছে।
ঈদ ধর্মীয় উদযাপন হলেও বাংলাদেশে তা উৎসবেরও। প্রিয়জনের কাছে ফেরা ঈদের প্রধান আনন্দ। গত শুক্রবার থেকেই লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটে যান। জীবিকার জন্য শহরবাসী মানুষ শত ভোগান্তি মেনেও হাসিমুখে ঈদে নাড়ির টানে ছুটেন বাড়ি। ভাঙা মহাসড়ক, যানজট, টিকিটের হাহাকার; কোনো কিছুই বাধা নয়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য সব বাধা তাদের কাছে তুচ্ছ।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম ও মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ক্বারী হিসেবে প্রধান জামাতে দায়িত্ব পালন করবেন।
জাতীয় সংসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সকাল সাড়ে ৮টায় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মুসল্লিরা এই জামাতে অংশ নেবেন। এই জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত।
এদিকে ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ। প্রায় ২২ একর আয়তনের এ ময়দানে ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনারের সামনে সকাল ৯টায় হবে ঈদ জামাত।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তাব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শোলাকিয়ায় সকাল ১০টায় ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। মাঠে একসঙ্গে তিন লাখের বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করে থাকেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। বরাবরের মতো এবারও দূরবর্তী মুসল্লিদের ঈদ জামাতে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঈদের দিন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঈদগাহসহ অন্যান্য ঈদগাহে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের নামাজে ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। যে কোনো হামলা ও নাশকতা মোকাবিলার র্যাবের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
র্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ‘ঈদের জামাত ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই।’ গত মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের জামাত উপলক্ষে র্যাবের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে র্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, ফুট ও মোবাইল পেট্রল, চেকপোস্ট, সিসিটিভি মনিটরিং করা হচ্ছে। চেকপোস্ট এমনভাবে করা হবে যাতে ঘরমুখো মানুষদের হয়রানির মুখে পড়তে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য ও সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কোনো জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা সার্বক্ষণিক সময়ের জন্য
তীব্র গরমের মধ্যে রোজা শেষে আজ ঈদের দিনের আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কড়া রোদ থাকবে না, আবার বৃষ্টিও থাকবে না।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেঘ থাকতে পারে। সকালের দিকে আবহাওয়া সহনীয় থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা ঈদের দিনের আবহাওয়া নিয়ে সমকালকে বলেন, ঈদের দিনের আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকবে। শুষ্ক আবহাওয়ায় এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। তবে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলেও তীব্র গরমের শঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, ঈদের দিন সন্ধ্যার আগে অথবা পরে কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কুমিল্লা, চাঁদপুর ও সিলেটের কিছু জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আগামীকালের পর থেকে আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-এ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘ঈদের এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, গ্রামগঞ্জে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে। এ দিন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন।’
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে সমাগত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য সুখী, আনন্দময় ও নিরাপদ ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। ঈদুল ফিতর আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক সীমাহীন আনন্দ, সুখ ও শান্তি। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ও নিরাপদে থাকুন। ঈদ মোবারক।’