শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২২ অপরাহ্ন
অনুসন্ধান২৪>>মা-বাবাকে ছাড়াই দাফন করা হয়েছে ভূমিকম্পে রূপগঞ্জে নিহত শিশু ফাতেমাকে
মা-বাবাকে ছাড়াই বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হলো ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে নিহত শিশু ফাতিমাকে। জানাযায় অংশ নিতে পারেননি তার বাবা আব্দুল হক। মেয়েকে শেষ বিদায় জানাতে পারেননি মা কুলসুমও।
ফাতিমা যে সময় দেয়াল চাপায় মারা যায় সেসময় মা কুলসুমও গুরুতর আহত হন। কুলসুমকে নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন আব্দুল হক। যে কারণে মেয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে পারেনি তিনি।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে ভূমিকম্পে বাড়ির পাশের একটি উঁচু দেয়াল ধসে মারা যায় আব্দুল হক ও কুলসুম বেগম দম্পতির ১০ মাসের মেয়ে ফাতেমা। গুরুতর আহত হন কুলসুম। ঘটনার সময় পাশে নানাবাড়িতে ছিল আরেক মেয়ে দুই বছরের নুসাইবা জান্নাত। এ কারণে তার কিছু হয়নি।
আব্দুল হক পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন। আহত স্ত্রীকে ঢাকায় আনা হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন তিনি।
প্রতিবেশী ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানান, ভূমিকম্পের সময় ফাতেমা মায়ের কোলে ছিল। ধসে পড়া দেয়াল সরিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেসময় মা কুলসুম অচেতন ছিলেন।
তিনি আরো জানান, বিকেলে বাবা-মাকে ছাড়াই বাড়ির পাশে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে ফাতেমাকে দাফন করা হয়।
ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন জানান, আব্দুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে দুপুর থেকে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে। এখন পর্যন্ত তিনটি হাসপাতালে গেলেও ভর্তি করাতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর শয্যা না থাকায় সেখানে ভর্তি নেয়া হয়নি। পরে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেও ভর্তি নেয়া হয়নি।
মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার ক্ষমতা নাই।’
এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে পরিষদের এই গ্রামটিতে বহুতল ভবন নেই। অধিকাংশই একতলা বা দুইতলা, যা নিয়ম ও নকশা মেনে নির্মাণ করা হয়নি
তিনি আরো বলেন, ‘যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে সেটির কোনো পিলার ছিল না। প্রাচীরটি অন্তত ১০ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু রডের কোনো কাজ সেখানে নেই। এমনকি উঁচু দেয়ালের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোনো পিলারও ছিল না। ইউপি এলাকাগুলোতে অনেকে নিয়ম-কানুন মেনে বাড়ি নির্মাণ করেন না। সেখানে তদারকিরও কিছু ঘাটতি আছে। আমরা আগামীকাল মাইকিং করে দেবো। গ্রাম পুলিশকে এ ধরনের অস্বাভাবিক রকম উঁচু দেয়াল বা অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তদারকি করার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালগুলো আমরা ভেঙে দেবো।’
নিহতের পরিবারকে দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্যও সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান ইউএনও সাইফুল ইসলাম।