শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৪ অপরাহ্ন
অনুসন্ধান২৪>>ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের হরিনা গ্রামের ৫ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মন্দিরের জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কয়েক দিন আগে হামলার পর ঘোষপাড়া, সাহাপাড়া, জেলেপাড়া, তাঁতিপাড়াসহ পুরো গ্রামে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুনরায় হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রামের অনেক বাসিন্দা।
এদিকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে হরিনা গ্রামের মন্দিরসংলগ্ন স্থানে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘পুনরায় হামলার ভয়ে অনেকেই এখন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র থাকতে বাধ্য হচ্ছে।’
স্থানীয় এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বে ঢেউখালী ইউনিয়নের হরিনা গ্রামে কেদার নাথ গোপ তার নিজস্ব জায়গায় রাধা গোবিন্দ মন্দির স্থাপন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কেদার নাথ দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় হিন্দু অধিবাসীরা মন্দিরটিতে পূজা অর্চনা করে আসছিল।
স্বাধীনতার পর কেদার নাথের আত্মীয় হিসেবে জয়দেব ঘোষ মন্দিরসহ ৪৫ শতাংশ জমি দাবি করে জাল দলিলের মাধ্যমে তা নিজের নামে করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। সম্প্রতি জয়দেব ঘোষ গোপনে মন্দিরসহ সেই জমি জনৈক বাবুল বেপারির কাছে বিক্রি করে দেয়। জমিটি দখল নিতে বাবুল বেপারি, জয়দেবসহ কয়েকশ ব্যক্তি ১৬ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মন্দিরটি ভাঙচুর করতে থাকে।
জানা যায়, এসময় স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বাধা প্রদান করলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় ১৫-২০ জন গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা কয়েকটি বসতবাড়িতে ঢুকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ প্রায় ১২ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। এ ঘটনায় পর সদরপুর থানায় একটি মামলা করা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মামলার পর জয়দেব ঘোষ ও বাবুল বেপারিরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
তারা মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। তারা প্রতি রাতে বিভিন্ন বাড়ির সামনে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছেন। ফলে গ্রামে ৫ শতাধিক পরিবার এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নন্দ ঘোষ, সুদেব মালো, শিখা রানী মালো, স্বপ্না ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাধা গোবিন্দ মন্দিরটিতে পূজা দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি জয়দেব ঘোষ তাদের পূজা দিতে বাধা প্রদান করে। এর প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। জয়দেব ঘোষ কেদার নাথের উত্তরসূরি সেজে জাল দলিলের মাধ্যমে মন্দিরের জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি সে জমিটি বিক্রি করে দেয়। সেই জমি বুঝিয়ে দিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। যা সিসি ক্যামেরা ফুটেজে ধারণ করা আছে।
মন্দিরের জায়গা দখল ও হামলার বিষয়ে জয়দেব ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মামলার আরেক আসামি বাবুল বেপারি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকদেব রায় বলেন, ‘মন্দির ভাঙচুর-হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। যেন হরিনা গ্রামে কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।’