সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
১৫ জন নিহত জাবালিয়া শিবিরে ইসরায়েলের হামলায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণ মিললো আমিরাত থেকে আসা যাত্রীর শরীরে ফের পাওলি দাম ঢাকাই চলচ্চিত্রে পদচিহ্নও থাকবে না স্বাধীনতাবিরোধীদের : এমপিদের মারামারি তাইওয়ানের পার্লামেন্টে দফায় দফায়, তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা আরো ২ দিনের ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে কেন বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি বরিশালসহ ৫ বিভাগে শান্ত-সাকিবরা মধ্যরাতে দেশ ছেড়েছেন বিশ্বকাপ খেলতে শুটকি সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি সৈয়দপুরে পুতিন পৌঁছেছেন চীনে কুড়িগ্রামে বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ভোটে থাকায় ১৪৫.৩৬ শতাংশ লোকসান বেড়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের নায়ক শাহরুখ খান রয়েছেন কাতারে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ ভারতীয় নৌ সেনা কর্মকর্তাদের মুক্তির বিষয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র মুক্তি পেল
আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ

আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ

আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ
আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ

অনুসন্ধান২৪>> ঈদের ছুটি এবার অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ হয়েছে– পহেলা বৈশাখ যুক্ত হওয়ায়। এর আগে পরপর দু’বছর রোজার মধ্যে পালিত হয় উৎসবটি। এবার এটি এসেছে ঈদের শেষে। এর আগে পরপর দু’বছর করোনার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বর্ষবরণ করা যায়নি। জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তখন চলতে হচ্ছিল আমাদের। ঈদও পালন করতে হচ্ছিল বিধিনিষেধ মেনে। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে এগোতে চেয়েছি। তবে সহজ হচ্ছে না কাজটি। বহিঃস্থ কারণও আমাদের ভোগাচ্ছে। এরই মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মে আসছে নানারকম উৎসব। সেগুলো কম প্রভাব রাখছে না জীবনে। সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসা পহেলা বৈশাখও আমাদের জাগিয়ে তুলছে– যেকোনো পরিস্থিতিতে। তবে অর্থনীতিতে এর প্রভাব কখনও পড়ছে বেশি; কখনও কম।

জীবনযাত্রার দ্রুত বদলের কারণে আর সব উৎসবের মতো নববর্ষও ঠিক আগের রূপে পালিত হচ্ছে না। যেমন, বৈশাখী মেলা আয়োজিত হলেও তার চিরায়ত উপকরণগুলো আগের চাহিদায় আর বিক্রি হচ্ছে না। এর প্রভাব আবার পড়ছে সংশ্লিষ্ট পেশা ও পেশা পরিবর্তনে। পুরোনো ঢাকাসহ দেশের কোথাও কোথাও হালখাতার চল থাকলেও বাণিজ্যের ধরন আমূল বদলে যাওয়ায় এটা হয়ে উঠেছে দূরাগত সাংস্কৃতিক স্মারক। সত্যি বলতে, উৎসবটির নবায়ন ঘটে চলেছে। গ্রামীণ জীবন হতে উঠে আসার পর এটা নগর জীবন থেকে আবার ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে। পহেলা বৈশাখ ঘিরে অর্থনীতিও সেভাবেই পল্লবিত হয়ে উঠছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেলে কিংবা স্তিমিত হলেও এটা ঘিরে কিছু উৎসাহব্যঞ্জক কর্মকাণ্ড ক্রমে বেড়ে চলেছে বৈকি।

যতদূর জানা যায়, পহেলা বৈশাখ তথা বর্ষবরণের সূচনা হয়েছিল কৃষিজীবী এ সমাজ থেকে খাজনা আদায় সহজ করতে। ফসল ওঠার পর বাকিতে কেনা জিনিসপত্রের দায়দেনাও মেটানো হতো এ সময়টায়। সেসব ঘিরে মিষ্টিমুখ, বৈশাখী মেলা ও হালখাতার প্রচলন হয়। কালক্রমে এটাকে খ্রিষ্টীয় নববর্ষের বিপরীতে এবং আরও পরে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে উদযাপনের উৎসাহ বাড়ে। এ অঞ্চলের মানুষের স্বাতন্ত্র্য ও রাজনৈতিক একাত্মতাবোধ গড়ে তোলায় বর্ষবরণ রাখে বিশেষ ভূমিকা। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এতে জাতীয় গৌরববোধ আর আনন্দ যুক্ত হতে থাকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের ধারায় এতে বেশি করে আসতে থাকে ঈদের মতোই কেনাকাটার ব্যাপার। নগরায়ণের গতির সঙ্গে এ উৎসব বেশি করে পালিত হতে থাকে শহরে।

ঈদের ছুটির মধ্যেই অনেকে রাজধানীসহ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে– একযোগে ফেরার ভোগান্তি এড়াতে। এদের একাংশ কি নগরীর বর্ষবরণে শামিল হওয়ার জন্যও ফিরছে না? ঈদে বহু মানুষ রাজধানী ছাড়লেও সিংহভাগ যে এখনও এখানেই রয়ে গেছে, সেটা বোঝা যায় এর পর্যটন স্পটগুলোয় গেলে। সুতরাং, বর্ষবরণে মানুষের ঘাটতি হবে না। তবে যারা দেরিতে ফিরবে, তারা গ্রামে অবস্থান করে শামিল হতে পারবে সেখানকার বর্ষবরণে। ঈদে অনেক প্রবাসীও দেশে এসে থাকেন। ঘরে-বাইরে পহেলা বৈশাখ পালনে তাদেরও কম আগ্রহ থাকবে না। এ উপলক্ষে বাড়তি খরচেও দ্বিধা করবেন না তারা। এবারকার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনের খরচ আলাদা করা অবশ্য কঠিন। তবে তারা নিশ্চয় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খরচ করতে পারবে, যাদের ঘরে একই সঙ্গে এসেছে প্রবাসী আয় আর দু-দুটি বোনাস।

পহেলা বৈশাখকে জাতীয় উৎসব বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি পালনের জন্য বিশেষ বোনাসও চালু হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বৈশাখী বোনাস চালু করতে এগিয়ে আসছে। বরাবরই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিশেষ আগ্রহ ছিল বর্ষবরণে। সে ধারায় একালের ব্র্যান্ড শপ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট হাউসগুলো দিনটি পালন করছে বিশেষ উৎসাহে। সাধারণের বাইরে তাদের ভেতর থেকেও তৈরি হচ্ছে ফুল, মিষ্টি ও ফলের বিরাট চাহিদা। রোজার মধ্যেও পহেলা বৈশাখ পালনের সময় মিষ্টি উৎপাদকদের ব্যবসা অনেক বাড়তে দেখেছি। ঈদের শেষে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে এটা হয়তো কম দেখা যাবে এবার। ঝিকরগাছায় উৎপাদিত ফুলের ব্যবসাও কি মার খাবে? আর ফলের ব্যবসা?

এ সময়টায় মনে রাখতে হবে তাদের কথা, প্রধান শিল্প খাতের কর্মী হয়েও যারা গেল মাসের বেতন নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি। তাদের একটা বড় অংশ কেবল বোনাস পেয়েছে। শেষ মুহূর্তে অর্থকড়ি হাতে আসায় সুবিধামতো কেনাকাটাও করতে পারেনি তারা। পহেলা বৈশাখে তারাও কিন্তু পছন্দমতো শাড়ি-লুঙ্গি কিনে থাকে। দিয়ে থাকে উপহার। সেজেগুজে ঘুরে বেড়াতেও কম দেখা যায় না গার্মেন্টস কর্মীসহ শ্রমজীবীদের। এখনও তাদের গভীর সংযোগ রয়ে গেছে গ্রামীণ জীবন ও কৃষির সঙ্গে। সেখানে অবশ্য বড়রকম রূপান্তর দৃশ্যমান। কৃষি-বহির্ভূত খাতেরও বিকাশ ঘটছে। সে প্রেক্ষাপটেও বর্ষবরণের রূপ বদলাচ্ছে সেখানে।

অনেকেই এ মুহূর্তে আছে দেশ ও দেশের বাইরের পর্যটন স্পটগুলোয়। নববর্ষের কারণে ছুটি দীর্ঘতর হওয়ায় পর্যটনে সুবিধা বেড়েছে এবার; খাতটি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটায় পর্যটন বাড়ছে দ্রুত। আর ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সময়টায় যদিও আবহাওয়া অনুকূলে নয়; তবু লম্বা ছুটি বলে কথা। এসব দেখে ভালোভাবে পহেলা বৈশাখ পালনে কয়েকদিনের ছুটি চালুর কথাও অনেকে তুলছেন। তাহলে দুই ঈদের পাশাপাশি এটাও বড় উপলক্ষ হয়ে উঠবে অবসর যাপন ও সামাজিক মেলামেশার। অর্থ সরবরাহ আর ভোগব্যয় বাড়ায় এতে অর্থনীতিও হয়ে উঠবে চাঙ্গা। মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে অবশ্য এর বিপরীত প্রভাবও পড়বে।

বর্ষবরণের অর্থনীতি কত বড় আর কী হারে বাড়ছে, এর গ্রহণযোগ্য সমীক্ষা নেই। অনুমাননির্ভর কথাবার্তা বলা হয়ে থাকে রোজা আর কোরবানির ঈদের বাজার নিয়েও। রোজার ঈদের মতো পহেলা বৈশাখেও কম-বেশি ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্নরা পৃথকভাবে কেনাকাটা করে থাকে। এ তথ্য উৎসাহব্যঞ্জক যে, দেশীয় বুটিক হাউসগুলো বার্ষিক বিক্রির ২০-২৫ শতাংশ করে থাকে বর্ষবরণ ঘিরে। রোজায় এর দ্বিগুণ। তবে এবার কতজন আলাদা করে পহেলা বৈশাখের পোশাক কিনেছে, বলা মুশকিল। করোনা হানা দেওয়ার পর বুটিক ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেটা অবশ্য এবার হয়নি। তারা বুঝেশুনেই পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করেছিল।

বর্ষবরণ ঘিরে বাজারে যা-ই আনা হোক, তার একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হলো– এগুলো দেশীয়। যেমন, পোশাক, মিষ্টি, ফুল, পিঠা। এর কোনো ক্ষেত্রে সেভাবে আমদানিনির্ভরতা আছে বলে মনে হয় না। তবে যে কোনো উৎসবে আমরা যা খেয়ে থাকি, তার উপকরণে বিদেশনির্ভরতা রয়েছে। যেমন, চিনি, ভোজ্যতেল ও মসলায় আমরা অনেকখানি বিদেশনির্ভর। এতে অবশ্য লজ্জার কিছু নেই। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজার থেকে আমরা কিনেই আনি। সে সক্ষমতাও অর্জন করেছি। তৈরি পোশাকের মতো আমাদের কিছু পণ্যের ওপরও নির্ভরতা আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের। যার যার ‘তুলনামূলক সুবিধা’ অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও বিনিময় করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এর মধ্যে পহেলা বৈশাখের মতো উৎসব যদি আমরা পুরোপুরি দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পোশাকে পালন করতে পারি, সেটা হবে আনন্দের আর লাভজনক।

দেশের বাইরেও বাঙালি কমিউনিটিতে বর্ষবরণের আয়োজন বাড়ছে। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে তাদের কাছে দেশীয় পণ্যসামগ্রী পৌঁছানোর। এভাবে শ্রমনিবিড় হস্তচালিত আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রক্ষার সংগ্রামটি জোরদার করতে পারব। বহির্বিশ্বে কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ গড়ে তোলার সুযোগও মিলবে। ইতোমধ্যে ‘পান্তা-ইলিশ’ নিয়ে নাগরিক মধ্যবিত্তের উৎসাহ কমে আসাটা সুলক্ষণ বটে। এর সঙ্গে বর্ষবরণের সম্পর্ক কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রযুক্তিপণ্যহীন জীবনে পান্তা খেয়ে কৃষিকাজে যাওয়ার বাধ্যবাধকতাও ইতোমধ্যে কমে এসেছে। আর এটা তো ইলিশের মৌসুম নয়। জাটকা বড় হতে দেওয়ার জন্য প্রধান সব অভয়াশ্রমে মাছ ধরা বরং নিষিদ্ধ এখন। ইলিশ নিয়ে উত্তেজনায় এর বেড়ে থাকা দাম আরও বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই পহেলা বৈশাখে। প্রয়োজন রয়েছে বরং এ হিসাব কষার যে, একটি রাষ্ট্র গঠনকারী এ অঞ্চলের বাঙালিরা গর্ব করার মতো কী কী জিনিস অর্জন করেছে। আর সেটা কতখানি টেকসই? চালের বস্তায় নাকি এর জাত লিখতে হবে নতুন এ বাংলা বছর থেকে। চালে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’র ধারণা কিন্তু ইতোমধ্যে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়েও বেড়ে চলেছে অবিশ্বাস। প্রশ্ন উঠছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে। বৈষম্য আর বিভেদও বাড়ছে আমাদের মধ্যে। এর মধ্য দিয়ে অগ্রযাত্রা ধরে রাখা তো কঠিন।

আরও পড়ুন

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © অনুসন্ধান24 -২০১৯