সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
অনুসন্ধান ২৪ >>অত্যাধুনিক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের গ্যারেজে তিন বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। শুধু নীতিমালা না হওয়া ও চিকিৎসকের অভাবে আইসিইউ সাপোর্ট-সংবলিত অ্যাম্বুলেন্সের সেবা মিলছে না। এজন্য অনেক সময় প্রাণহানির ঝুঁকিতে পড়ছে মুমূর্ষু রোগীরা। তবে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল রাখতে মাঝে মাঝে চালানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে কোটি টাকার অধিক মূল্যের ইতালির তৈরি আইসিইউর সব সুবিধাসংবলিত অত্যাধুনিক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়। যাতে রংপুর অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সেই সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভেন্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবন রক্ষাকারী সব যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে এটি রোগীর জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে চালক ছাড়াও একজন করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয় থাকতে হবে। নয়তো এটি ব্যবহার উপযোগী করে রোগীকে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করা যাবে না।
রমেক হাসপাতালের নতুন ও পুরোনো কার্ডিয়াক (সিসিইউ) ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪৮টি। এর বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। আবার খুব গরম ও শীতে হƒদরোগে আক্রান্ত রোগীর ভর্তি বেড়ে যায়। হঠাৎ হƒদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কারও অবস্থা গুরুতর হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া আইসিইউতে শয্যা রয়েছে মাত্র ১০টি। অনেক সময় শয্যা না পাওয়া মুমূর্ষু রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। রংপুর ও এর আশপাশে কোনো মুমূর্ষু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিতে হলে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সই বিকল্প ব্যবস্থা। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পরও শুধু নীতিমালার অভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স শাখার এক কর্মচারী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি পাওয়ার পর থেকেই এটি গ্যারেজে আছে। যাতে সচল থাকে এজন্য মাঝে মাঝে ইঞ্জিন স্টার্ট করা হয়। কবে চালু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
যেখানে হƒদরোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে, রয়েছে মৃত্যুর ঘটনাও। সেখানে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত সময়ের অন্যত্র নিয়ে যেতে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি কারও কারও জন্য খুবই জরুরি। নয়তো রোগী বহনে যেমন চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে তেমনি জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে। এ কারণে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে তালাবন্দী না রেখে রোগীর সেবায় এটি চালু করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন সচেতন মহলসহ রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ থাকে না স্বজনের। কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি চালু হলে তারা উপকৃত হবেন। আকস্মিক হার্টের সমস্যার কারণে কারও অবস্থা গুরুতরও হলেও দ্রুত তাকে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, রমেক হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা আছে মাত্র ১০টি। উপরন্তু মাঝে মাঝে দুয়েকটি শয্যা খারাপ হয়ে যায়। তাই শয্যা না পাওয়া মুমূর্ষু রোগীকে অন্যত্র নিতেও খরচ বাড়ছে স্বজনের।
এ বিষয়ে রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, লোকবল ও নীতিমালা না থাকায় কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্সটির সার্ভিস অব্যাহত আছে। নীতিমালা করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সটি টেবিল অব অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট তালিকাভুক্ত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, শুনেছি লোকবলের অভাবে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্টেদের সঙ্গে কথা বলে সাধ্যের মধ্যে যা করা দরকার তা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।